বছর শুরু হতে না হতেই খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বইছে উত্তুরে হাওয়া। ঘরের বাইরে গেলে শরীরে জাগছে কাঁপন। উত্তরের জনপদগুলোয় দিনের বেলায়ও আলো জ্বালিয়ে চলেছে যানবাহনগুলো।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ডিসেম্বরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলেও এ মাসে শীত জাঁকিয়ে বসতে পারে। হতে পারে একাধিক তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, এমন কুয়াশা আরও দু-তিন দিন থাকবে। এই সময়ে ঠান্ডা এখনকার মতোই থাকবে। এরপর কুয়াশা কেটে গেলে রাতের তাপমাত্রা ক্রমেই কমে শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। জানুয়ারির ৬ থেকে ৭ তারিখের পর রাতের তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসতে পারে।
আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে একটি থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং একটি থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এক দিন ধরে দেশের চুয়াডাঙ্গা জেলা এবং পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
সাধারণত কোনো স্থানে তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এই সময়ে পাবনার ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রির আশপাশে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে, ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, হিমালয়ের কোলঘেঁষে অবস্থিত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশার কারণে তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। হিম বাতাসের কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে জেলাজুড়ে। সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পার হলেও সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, এ দিন জেলার সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সকাল ৯টায়।
এদিকে জেলায় শীত নিবারণের জন্য দুস্থদের জন্য সরকারিভাবে যে কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার কম্বলের চেয়ে গরম কাপড়ের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে চাদর, মাফলার, জ্যাকেট সরকারিভাবে দেওয়া হলে গরিব মানুষের উপকার হবে বলেও জানান তারা।
সরেজমিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র শীতে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ বেশি কষ্টে পড়েছে। কাজ না পেয়ে অলস সময় পার করছে তারা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, বুধবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে এই তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ ছাড়া দিনের তাপমাত্রা বাড়ায় এবং রাতের তাপমাত্রা কমায় গত কয়েক দিনে জেলায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ঠান্ডা আর সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত।
এদিকে শীত উপেক্ষা করে কাজের জন্য বের হতে হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। হাটবাজারের শ্রমিক ও কৃষিশ্রমিকদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাজের সন্ধানে শহরে এসেও অনেকে কাজ পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। শীত উপেক্ষা করে রিকশা-ভ্যান নিয়ে শহরে এসে পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছেন না চালকরা।
খুলনা গেজেট/এইচ